মাদ্রাসায় ছাত্র বালাৎকার (শেষ পর্ব)

মাদ্রাসায় ছাত্র বালাৎকার (শেষ পর্ব)

মাদ্রাসায় ছাত্র বালাৎকার
(শেষ পর্ব)

আমাদের সল্পদৈর্ঘ আলোচনা শেষে আমারা একটা সিদ্ধন্তে পৌঁছালাম।
আর তা হলো যে করেই হোক ব্যপারটা মোহতামিম (প্রিন্সিপাল) পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। যাতে করে লম্পট মোল্লাটা উপযুক্ত শাস্তি পায়৷

কিন্তু ব্যপরটা খুবই সেনসেটিভ, তার উপর আমাদের বয়স ও কম (১০-১৫)। কারো সাহস হচ্ছেনা যে এটা মোহতামিম সাহেবকে গিয়ে বলার।
অনেকটা বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধার মত অবস্থা আরকি।
তো? উপায় কি? কিছু একটা তো করতে হবে৷

অতঃপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম একটা কাগজে লিখে কাগজটা মোহতামিম সাহেবের কাছে পৌঁছে দেই।
এতেও বিপত্তি! কি লিখব! কিভাবে লিখব!

মাদ্রাসায় পড়ার পূর্বে কিন্ডারগার্টেন এ বছর তিনেক পড়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। সে সুবাদে সাধারণ দরখাস্ত লেখার নিয়মটা আমি জানতাম। ফলে সেভাবেই বালাৎকার কারী মোল্লার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ও শাস্তির আবেদন সাদৃশ্য একটি দরখাস্ত লেখার দায়ভার পড়ল আমার উপর।

এদিকে আমরা কয়েকবার মসজিদে উঁকি মেরে দেখে আসেছি যে মোল্লা সাহেব কোথায়। নাহ, উনি কোথাও যায়নি, মসজিদ থেকেও বের হয়নি। আমাদের রুমে উনার অনুপস্থিতিতে ছুটির দিনের পরিবেশ বিরাজ করছে। অন্যদিকে সকালের খাবারের সময় হয়ে গেছে। আমরা খাওয়া দাওয়া করে দরখাস্ত লেখার কাজ শুরু করলাম।

আমাদের সল্প জ্ঞানে যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি। যাতে কোন পয়েন্ট বাদ পরে না যায়। সবচেয়ে বড় ব্যপার যেটা সেটা হলো, পিচাশ মোল্লার পৈচাশিকতার ভয়বহতাটা যেন মোহতামিম সাহেব সহজেই বুঝতে পারেন। তাই আমরা বিভিন্ন শব্দ বিষেশণ ব্যবহার করে দরখাস্তটাকে জীবন্ত করার চেষ্টা করেছি।

লেখা শেষ। এবার হস্তান্তরের পালা। আমি এবং সাথে জামাল ও আরেক সহপাঠীকে নিয়ে মোহতামিম এর রুমের দিকে গেলাম। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক করে ভয় পেয়ে না দিয়েই ফেরত এলাম। এভাবে পকেটে দরখাস্ত নিয়ে আমরা বিভিন্ন অযুহাতে মোহতামিম এর রুমের কাছে বেশ কয়েকবার ঢু মারলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেওয়ার সাহস আর কারো হয়ে উঠছে না।

এইভাবে সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে বিকেল। আসরের আজান হলো। আমি আর এক সহপাঠী টিউবওয়েল এর সামনে গিয়ে অযু শেষে দাড়ালাম। অজুর জন্য মোহিতামিম সাহেব আসতে পারে।
তাই হলো, মোহতাহিম সাহেব আসলেন। আমি তার খেদমতে টিউবওয়েল চেপে দিচ্ছি। পাশের সহপাঠী ইশারায় বলছে আমাকে কাগজটা দেওয়ার জন্য।
মোহতামিম সাহেবের অজু শেষে চলে যাবেন এমন সময় আমি পকেট থেকে বের করে উনার দিকে দিলাম। উনি জিজ্ঞাসা করলেন কি এটা।

আমি মাথা নিচু করে বললাম, “মুখে বলতে পারব না। আপনি এক্ষুনি একটু পরে দেখেন, খুব জরুরী।”
কাগজটা হাতে নিয়ে উনি উনার রুমে চলে গেলেন।
বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে আমরা দেখছিলাম উনি কাগজটা খুলে কিনা।

হাতমুখ মুছে উনি কাগজটা হাতে নিলেন এবং অবশেষে তিনি দরখাস্ত টা পড়লেন।
আমরা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম।
পেরেছি!! 🙂

নামাজ শেষে আমাদের চোখ নোহতামিম এর দিকে। কি করেন উনি সেটাই এখন দেখার বিষয়। চিন্তিত ও রাগান্বিত মোহতামিম সাহেব ফোনে কয়েকটা কল করলেন৷
মাগরিব নাগাদ ম্যানেজমেন্ট এর বেশ কয়েকজন চলে আসলো৷
মাগরিবের পর অফিস কে কক্ষে মোল্লা সাহেবকে মধ্যমণি (!) করে একটানা চলল রুদ্ধদ্বার বৈঠক।
মাঝে এশার নামাজের জন্য ছোট বিরতি।
আমরা মাঝে মাঝেই নানা বাহানায় অফিসের বাহিরে চক্কর মারছিলাম।
রাত প্রায় ১০ টা। ইতিমধ্যেই আমাদের রাতের খাবার খাওয়া হয়ে গেছে৷ ছোট মানুষ তাই রাত ১০ টা অনেক রাত। অবশেষে বিচারের সমাপ্তি না দেখেই বাধ্য হয়ে ঘুমোতে গেলাম।

পরদিন সকালে দেখলাম ও শুনলাম মোল্লা সাহেবকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাতের আঁধারেই৷ খুবই লঘু শাস্তি ( এখন মনে হয়)।

যাইহোক, আমরা ঘুরে দাড়িয়েছিলাম। অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে চেষ্টা করেছি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার।
আমি বলব আমরা সফল হায়েছিলাম।
তবে ওখানেই শেষ নয়। ঐ ঘটনার পর আমাদের সাহস ও মনোবল দুটোই বাড়ে এবং পুরো মাদ্রাসায় একটা ভীতি তৈরী হয় অন্যদের (আমরা জানতে পেরেছিলাম আরো ২-৪ জন এই কাজ করেছে, কিন্তু ঐ ঘটনার পর তারা সজাগ হয়ে যায়, ফলে উপযুক্ত প্রমাণ সহ তাদের হাতেনাতে আর ধরা যায়নি) মাঝে। ফলে অনেকাংশেই কমে এসেছিল এই অপকর্ম।

মাদ্রাসায় এই ধরনের অপকর্ম ছাড়াও একটা বিশাল গ্রুপ সমকামীতায় লিপ্ত৷ আমি নিজেই পরবর্তীতে মসজিদের ছাদ সহ ৩-৪ টা ঘটনা হাতেনাতে ধরেছি। এমন অনেক অপকর্মই হয় ভেতরে যেটা বাইরের লোকেরা জানেনা।
আর এরাই আমাদের পরবর্তীতে জান্নাতে যাবার রাস্তা দেখায়৷

ভেবে দেখুন কোন রাস্তায় যাচ্ছেন!!🙄🙄

“জন্মগতভাবে পাওয়া ধর্ম পালনে বিরত থাকুন,
যদি পালন করতেই হয়, আগে সত্য জানুন, প্রশ্ন করা শিখুন, তারপর ধর্ম পালন করুন।”

অন্য কোন অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তী লেখায় লিখব। 🙂

Share on

খাদ মুভি রিভিউ

🎬 মুভিঃ খাদ (এডভেঞ্চার)⭕ পরিচালকঃ কৌশিক গাঙ্গুলি⭕ অভিনয়েঃ পল্লবী চ্যাটার্জি, অর্ধেন্দু ব্যানার্জী, মিমি চক্রবর্তী, রুদ্রনীল

Read More »