মাদ্রাসায় ছাত্র বালাৎকার!!!
(১ম পর্ব)
খুলনা-বাগেরহাটের দুই সৎ ভাই মাহবুব ও সাইফুল। মাহবুব তার বাবার প্রথম পক্ষের আর সাইফুল দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান। দুজনের মধ্যে মাহবুব বড়। সাইফুল একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওর বাম পাটা বাঁকানো ছিল হাটুর দিকে। তাই সোজা হয়ে দাড়াতে বা হাঁটতে পারতো না।
আমি তখন সেলামতি মাদ্রাসায় পড়ি। আমার বাসা থেকে সেলামতি ৪/৫ মাইল দূরে। কিন্তু প্রথম বেশ কিছুদিন মনে হতো আমি একটা ভিন্ন গ্রহে চলে এসেছি। ভীষণ কষ্ট হতো। বারবার বাড়ি ছুটে যেতে ইচ্ছে করত।
কিন্তু বেতের ভয়ে সেটা করার সাহস পেতাম না। মাদ্রাসা পলায়ন তখন খুবই গুরুতর অন্যায়। পালানোর পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বা পরিবারের মাধ্যমে আবার ফেরত আসার পর মুখোমুখি হতে হতো ভীষণ প্রহারের সাথে নানাবিধ অতিরিক্ত শাস্তি। অনেকসময় তাকে কয়েদিদের মত ও রাখা হতো, মানে তার সাথে অন্য ২/৩ জন সহপাঠী পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত থাকতো। এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলেও।
যাইহোক, এসব নানাবিধ কারণে মাদ্রসা পলায়নের চিন্তা করিনি কখনো।
তবে খুলনা-বাগেরহাট থেকে মাহবুব-সাইফুল দুই ভাই কে দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। এত দূরে কেন!!
এমন না যে অন্য কোন জেলার ছাত্র আমাদের মাদ্রাসায় নেই। ফরিদপুর, বরিশাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী সহ বিভিন্ন জেলার ছাত্র আছে এখানে।
ওহ, আসল কথায় ফিরি।
মাহবুব আর সাইফুলের মধ্যে সাইফুল অনেক বেশী দুষ্টু প্রকৃতির ছিল। বিপরীতে মাহবুব ঠান্ডা মাথার ছেলে এবং খুব জেদী ছিল।
আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। ওরা ২ ভাই আমার সহপাঠী ছিল। সে বছর আমরা মাদ্রাসার সোয়াদ শ্রেণী (৩য় শ্রেণীর) ছাত্র।
অই বছর আমাদের ক্লাসের দায়িত্বে নিয়ে চাকুরীতে যোগদান করলেন নতুন একজন মোল্লা (শিক্ষক হুজুর)। নতুন শিক্ষক পেয়ে আমরা কিছুটা খুশি ই হয়েছিলাম বৈকি!
কিন্তু আমাদের সেই খুশি খুশি ভাব ২ দিন ও টিকলো না তার রুদ্রমূর্তির সামনে। অত্যন্ত রাগী এবং ছাত্র প্রহার করায় পারদর্শী ছিলেন। সামান্য সামান্য বিষয়ে বেধড়ক প্রহার করতেন তিনি যে কাউকে। পড়াশুনোয় কোন ভুল, জোরে কথা বলা, এমনকি খাবার সময় হাত থেকে কোন বস্তু পরে গেলে সেই আওয়াজের জন্যেও মার খেতে হয়েছে ছাত্রদের।
আমিও কয়েকবার মার খেয়েছি।
সুতরাং যেকোন কিছু করার আগে প্রতিটা ছাত্র ২ বার ভাবতো। আবার মার খেতে হবেনা তো! খুব অল্প সময়েই উনার হিংস্রতা মাদ্রাসা জূড়ে সুখ্যাতি পেল। আমাদের কা হে সে তখন সাক্ষাৎ যমদূত।
আর ঠিক অই সময়েই সাইফুল মাদ্রাসা পলায়ন করে!!
সে বাগেরহাট চলে যায়। আমরা ভেবেছিলাম সে আর ফেরত আসবে না৷ কেননা আসলে তাকে রিমান্ডের চেয়েও অধিক প্রহারের শিকার হতে হবে। যা স্বাভাবিকভাবেই কেউ চাইবেনা৷
আর মাদ্রাসা থেকে বাসা দূরে হওয়ার মাদ্রাসা থেকেও তাকে ধরে আনার জন্য কাউকে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
অতএব সাধারণ গতিতেই সব চলছিল।
কিন্তু হঠাৎ একদিন সাইফুলকে নিয়ে ওর বাবার মাদ্রাসায় আগমন৷
সাইফুলের চেহারা ভয়ে শুকিয়ে গেছে। ওর ভয়ের কারণ টা ওর বাবা বুঝতে না পারলেও আমরা পারি। কেননা আমরা খুব ভাল ভাবেই জানি ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে৷
ওর বাবা ওকে আমাদের শ্রেণী শিক্ষকের হাতে সমর্পণ করে দিয়ে বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
এদিকে আমাদের সকলের মনযোগ পড়ায় না হয়ে এখন সাইফুলের উপর। কি হবে সাইফুলের সাথে? কি মার টাই না খেতে হবে!! উফফফ!! ভাবলেই গা শিউরে উঠছে।
***বাকিটা পরের পর্বে…..