মাদ্রাসায় ছাত্র বালাৎকার
(২য় পর্ব)
সাইফুলের বাবার প্রস্থানের পর আমরা সবাই যখন ওর মার খেয়ে কান্নার আর্তনাদ শুনতে প্রস্তুত, তখন মোল্লা সাহেব আমাদের হতাশ করে সাইফুলকে তার রুমে (রুম বলতে ওনার থাকার যায়গাটাকে একটা পর্দা দিয়ে আড়াল করা ছিল। মূলত রূম একটাই, তবে শুধু একপাশে কাপড়ের পর্দা দিয়ে দেয়াল বানিয়ে আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা আরকি!) নিয়ে গেলেন।
তাতেও আমাদের ধৈর্যের কমতি হয়নি। আমরা অধীর আগ্রহে সাইফুলের আর্তনাদ শুনার জন্য মুখিয়ে আছি। আমরা ভাবছিলাম পর্দার আড়ালেই বেত্রাঘাত শুরু হবে আর আমরা এওয়াশ থেকে তা শুনব।
কিন্তু নাহ, ৩০/৩৫ মিনিট পর সাইফুল মাথা নিছু করে বেড়িয়ে আসলো! আমরা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মোল্লা সাহেব ও পর্দা সরিয়ে সামনাসামনি।
তাই তখন আর কেউ সাইফুলকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি।
সাইফুল আমাদের সাথে কোরআন শরীফ নিয়ে পড়া শুরু করল।
আমরাও হতাশ ( আসলে ছোট বেলায় সহপাঠীদের মার খেতে দেখে সবাই একটু অন্যরকম আনন্দ পায় কিনা!) পড়ায় মনযোগ দিলাম।
আমাদের রুমটা খুব বেশী বড় ছিলনা। ফলে সব ছাত্রদের রাতে ঘুমানোর মত পর্যাপ্ত যায়গা হতোনা। তাই অনেকেই অন্যান্য শ্রেণিতে ও মসজিদে ঘুমাতো।
আমিও মসজিদের পাশে কিতাব বিভাগে ঘুমাতাম।
সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে৷ সাইফুল ফিরে এসেছে ১৫-২০ দিন হতে চলল৷
এমনি একদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অযু সেরে মসজিদে গেলাম ফযরের নামাজের জন্য।
ফজরের নামাজ শেষে মসজিদে হাদিস পড়া হতো এবং বিভিন্ন আলোচনা হতো। সেই ফাঁকে আমরা সহপাঠীরা পিছনে বসে ফিসফিসিয়ে গল্প করতাম। সেদিনও তার বিপরীত নয়।
আমি প্রতিদিনের ন্যায় ওদের সাথে গিয়ে বসলাম।
কিন্তু সবাইকে কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। ওদের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা ঘটেছে যেটা আমি জানিনা।
আমি জিজ্ঞেস করত যাবো, তখনি জামাল নামের এক সহপাঠী আমার কানের কাছে এসে বলল একটা ঘটনা ঘটে গেছে!
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি ঘটনা?”
জামাল আমাকে উত্তর দিল, “আজ রাতে হুজুরে আর সাইফুল জিনা (যৌনকর্ম) করার সময় ধরা খাইয়া গেছে।”
শুনে আমিও হতভম্ব! বলে কি! জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে কি হলো?
উত্তরে জামাল বলল, ” রাইতে আমি টয়লেটে যাওয়ার লিগা উঠছি, তাড়াহুড়ো কইরা বাতির সুইচ অন করছি। আর তখন দেখি হুজুর আর সাইফুল জিনা করতাছে (উলঙ্গ অবস্থায় ওদের ২ জনকে একসাথে দেখে জামাল)”
[বলা বাহুল্য, বাতির সুইচ বোর্ড টা মোল্লা সাহেবের পর্দার ভেতরে ছিল]
জিজ্ঞেস করলাম, “মোল্লা সাহেব কোথায়?”
আংগুলের ইশারায় দেখালো সামনের দিকে এক কাতারে মাথা নিচু করে বসে আছে। স্বাভাবিকভাবে সাধারণত আমাদের ক্লাসের ছাত্রদের দিকে নজর রাখতো মাঝে মাঝে তাকিয়ে। আজ তা নয়।
এদিকে সাইফুলের খোঁজ করে ওর কাছে গিয়্র বসলাম, ওকে জিজ্ঞাসা করাতে কিছু বলছে না। মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে।
বড় ভাই মাহবুব রাগে আর লজ্জায় দাত খিটমিট করছে।
যাইহোক, নামাজ শেষ করে আমরা আমাদের শ্রেণিকক্ষে গেলাম। সবাই একে অপরের সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলছি আর আঁড়চোখে খেয়াল রাখছি মোল্লা সাহেব রুমে প্রবেশ করলো কিনা। এদিকে আমি মাহবুব, জামাল, সহ আরো ২/৩ জন মিলে সাইফুল কে ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করলাম ঘটনা কিভাবে কি হলো।
তারপর সাইফুল যা বলল তার সারমর্ম এই,
সাইফুল ফেরত আসার পর পর্দার আড়ালে নিয়ে সাইফুলকে মারের ভয় দেখানো হয়। আর অই বয়সে (১০-১২ বছর) মারের ভয় সবার মধ্যেই প্রকট থাকে। সাইফুলের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মারের হাত থেকে বাঁচার রাস্তাও মোল্লা সাহেব সাইফুলকে বলে দিয়েছে। সেটা কি? সেটা এই যে, মোল্লা সাহেব যখন যাই যাই বলবে তাই তাই করতে হবে, অন্যথায় প্রহারের সম্মুখীন হতে হবে। সাইফুলের কাছে রাজি হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। যদিও সাইফুল জানতো না যে তাকে বালাৎকারের শিকার হতে হবে। এই ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিগত ১৫-২০ দিন যাবত সাইফুল বালাৎকারের শিকার হয়।
এদিকে সকাল ৭ বেজে এলো, নাস্তার সময়। অথচ মোল্লা সাহেব এখনো মসজিদে। সে মসজিদ থেকে বের হয়নি।
এদিকে আমরা এই সুযোগে আমাদের মত করে একটা মিটিং সেরে নিলাম কি করা যায়।
* পরবর্তী অংশে বাকিটা।