দুঃস্বপ্ন

দুঃস্বপ্ন-১

-হ্যালো।
– হায় জান,
– কি করছো?
– এইতো পড়া শেষ করে মাত্র শুতে এলাম।
– I LOVE YOU JAN (প্রায় ২-২.৫ বছর পর মেয়েটা বলল, এতিদিন সে I HATE YOU বলতো। কেননা একদিন ছেলেটা বলেছিল I HATE YOU মানে আমি তোমায় বেসম্ভব ভালোবাসি। যদিও সেটা I LOVE YOU এর মত লাগেনা। অনেক বলা স্বত্তেও মেয়েটা I LOVE YOU বলত না।) আজ তুমি আমার কথা শুনে ভাল করে পড়েছো তাই I LOVE YOU  বললাম।
– তাহলে এখন থেকে তো প্রতিদিনইই বলতে হবে।
– তুমি যদি ঠিক মত পড়ো তাহলে প্রতিদিন ই বলব। ও আচ্ছা শোন, তোমায় একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, পরেতো আবার বলবা আমি বলিনি কেন!
– কি কথা জান?
– আজ সকালে আমাকে দেখতে আসছিল।
– তারপর?
-তারপর আর কি? দেখে চলে গেছে।
– ছেলেপক্ষ কিছু বলছে বা জানাইছে?
– আরে তুমি এত চিন্তা করো কেন গো? এমনতো কতই দেখতে আসলো। আমাকে এখন বিয়ে দিবে না।
– ওহ। ( ছেলেটার খুব চিন্তা হচ্ছে) তুমি তো জানোই যদি খারাপ কিছু হয় আমি কিন্তু বাঁচব না।
– এ জন্যেই তোমাকে কিছু বলতে চাইনা। অযথা চিন্তা করো, কিছু হবেনা বললাম তো। এটা নিয়ে আর টেনশন করবানা। ওকে?
– আচ্ছা। ( কিন্তু ছেলেটার মাথায় তবুও যেন ঘুরপাক খাচ্ছে)।

এভাবেই দীর্ঘসময় কথা বলার পর একসময় কথা শেষে ঘুম।

ছেলেটা পড়ার প্রতি খুব মনোযোগী। তাকে ভাল রেসাল্ট করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভালবাসার মানুষটিকে চিরআপন করার সকল কর্ম সম্পাদন করতে হবে। এইতো আর মাত্র কটা মাসের অপেক্ষা।
পরদিন সন্ধ্যায় পড়তে বসে চ্যাটিং চলছে।
– কাল কিন্তু গ্রুপ স্টাডি,  সময় মত চলে এসো। আমি সবগুলো টাস্ক করেছি। তুমি করেছো?
– কয়েকটা করেছি। কিন্তু বুঝিনা গো।
– সমস্যা নেই। আমি বুঝিয়ে দিব।
– আমি কাল পড়তে আসব না। তোমার সাথে দেখা করতে আসব।
– আচ্ছা আইসো। আমরা কথা বলবো।

এভাবেই আরো অনেক কথায় রাত পেরিয়ে সকাল।
ছেলেটা কাজ শেষ করে সময়মত উপস্থিত।
মেয়েটা আসছেনা। ছেলেটা ফোন করলো।
রিসিভ হচ্ছেনা। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিল ছেলেটা। এবার ওয়েটিং।

ছেলেটার মনে একটা ভয় ঢুকে গেল। আবার ছেলেপক্ষ দেখতে আসেনিতো? বিয়ে নিয়ে ঝামেলা হচ্ছেনা তো?
তবে কেন আসছে না, ফোন ও রিসিভ করছেনা।
আনেক সময় পার করার পর ছেলেটা বুঝল আজ আর আসবে না মেয়েটা।
এভাবেই ভাবতে ভাবতে ছেলেটা বাসায় গেলো।  ভাবনাগুলো পিছু ছাড়ছেনা।
তাই সে একটা মুভি দেখতে বসে পড়ল।
১৫-২০ মিনিট পর মেয়েটার ফোন।
-হ্যালো।
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
-তাই নাকি? ( একটু হেয়ালি করে)
-তোমার কি মনে হয় আমি ফান করছি?
আমি সিরিয়াসলি বলছি, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

চলবে….

দুঃস্বপ্ন-২

-কি বলছো তুমি এসব?
-হ্যাঁ, সত্যি বলছি। আব্বু, চাচ্চুরা আজ ছেলেদের বাসায় গিয়ে পাঁকা কথা দিয়ে আসছে। শুক্রবার বিয়ে।
-এভাবে হুট করে কেন করলো এসব?২ দিনেই সব ঠিক করে ফেলল। তোমার বাবা পাগল নাকি? তোমার মতামত নাই?
-আম্মু বা কেউ কিছু জানেনা। আব্বু সব ঠিক করে বাসায় এসে জানাইছে। বাসার সবার মন খারাপ। আম্মু কোন কথাই বলছে না।
– তাহলে তুমি তোমার আব্বুকে বলো, যে তুমি এই বিয়েটা করতে চাওনা।
– কি বলব আমি? আব্বুর মুখের দিকে তাকালে আমি কিছু বলতে পারিনা।
-বল যে তুমি এখন বিয়েটা করবেনা। পরীক্ষাটা শেষ হোক তারপর করবা।
-আমি কিছু বলতে পারব না। আমার আব্বু সবাইকে বলে ফেলছে। দাওয়াত ও দিয়ে আসছে আসার সময়। এখন আর কিছু হবে না।
-কি বলছো তুমি এসব!!! আমার কি হবে?
আমার কথাটা একবার ভাবো। আমি কি করে বাঁচবো?
– আমি কিছু জানিনা। কিন্তু আব্বুর মুখের দিকে তাকালেই আমি নির্বাক হয়ে যাই।
-অন্তত ১বার তোমার বাবাকে বলে দেখো, সে যদি রাজি নাহয় তাহলে আর কিছু করতে হবেনা তোমায়। আর তুমি কি বিয়েটা করে ভাল থাকবে?
-আমি পারব না কিছু বলতে। আর আমার যত কষ্টই হোক আব্বুর জন্য আমি সব করব।
-(রাগ ও অভিমানের সাথে) তাহলে আর কি! শাদী মোবারাক, করো তুমি বিয়ে। আমার কথাটা একবার ও ভাবলানা তুমি।

ফোন কেটে গেল। ছেলেটা অগোছালো অবস্থায় একটা টি-শার্ট আর হাফ প্যান্ট পরে বের হয়ে গেলো। রান্না হয়ে গেছে। মা ডেকে বলল এখন কোথায় যাস? খাবিনা?
ছেলেটা বলল একটু বাজারে যাচ্ছি। এসে খাবো।
এই বলে সে হুট করে বেরিয়ে গেল। এক বন্ধুকে(হাসান) ফোন দিল সে।
-দোস্ত ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
-কি বলিস! কখন, কিভাবে কি? তুই কোথায় এখন?
-আমি বাজারে আসতাছি।
-আচ্ছা আয়। আমি বের হচ্ছি। টেনশন করিস না। আসতাছি আমি।

ছেলেটা একটা চায়ের দোকানে বসে একটার পর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে যাচ্ছে। দুনিয়ার সব অন্ধকার তার সামনে। সে তার এক ভাইকে ফোন দিল। ভাই শুনেও অবাক। ভাইল বলল,”পাত্রের সাথে কথা বলে বিয়েটা ভেঙে দে”।
এমন সময় হাসান এলো। ছেলেটা হাসানকে সব খুলে বলল। এরপর মেয়েটাকে আবার ফোন দিল।
-হ্যালো.
-তুমি আমাকে ওই ছেলের নাম্বার টা দাও। আমি কথা বলছি। আমি ওরে বুঝিয়ে একটা ব্যবস্থা করছি।
-তুমি কি একটা ঝামেলা করতে চাও? এসব কিছু তুমি করবে  না।
-তোমার তো কোন সমস্যা হবেনা। আমি ওরে বুঝিয়ে বলে সব ব্যবস্থা করছি।
-কি বলবা তুমি? সবাই তো জানবে। বিয়েটা ভেঙে গেলে আমার আব্বু সবাইকে কি বলবে? সেই একই তো হলো। আমার আব্বুর সম্মান টা যাবে।
– তুমি শুধু তোমার বাবার কথাটাই ভাববে? আমার কথাটা ১ বার ও ভাববে না?
-আমি আব্বুর জন্য সব করতে পারি।
(পাশ থেকে হাসান বলছে, পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে দেখ কি বলে। ছেলেটা বলল, আমি এখন পালিয়ে কোথায় যাব? কিভাবে কি করব? আমি তো পালাতে চাইনা। হাসান বলল, তুই বলে দেখ, রাজি হলে পরের টা পরে দেখছি।)
-আচ্ছা তাহলে তুমি চলে আসো। আমরা পালিয়ে বিয়ে করব। কাউকে কিছু যেহেতু বলতে দিবানা তাহলে তুমি চলে আসো।
-নাহ। আমি আসব না। আমি কোনভাবেই এমন কিছু করব না।

(চলবে…)

দুঃস্বপ্ন-৩

-তুমি এমন কেন করছো গো? আমার একটা কথাও কি তুমি রাখবা না? তোমার বাসায় জানাচ্ছো না, পাত্রের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি তাও বলতে দিচ্ছো না, পালিয়ে যাওয়ার কথা বলছি তাও করছোনা। কিছু একটা তো হ্যাঁ বলো প্লিজ।
-দেখো, এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করার নাই। আমি যত কষ্টেই থাকিনা কেন আমি আমার বাবকে এগুলো বলতে পারবোনা। আর কোনভাবে বিয়েটা ভেঙে গেলে আমার বাবার মানসম্মান নষ্ট হবে। আমি তা চাইনা। আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসি তার চেয়ে আমার বাবাকে বেশী ভালবাসি।
-বারবার একই কথা বলছো। তোমার বাবার কথা, তমার পরিবারের কথাই শুধু ভাবছো। আমার ভেতর কি হচ্ছে সেটা কেন তুমি বুঝতে পারছোনা? এই ৩ টা বছরের ভালোবাসার কি কোন মূল্য নেই?
-আছে। কিন্তু আমি আমার বাবার মুখের দিকে তাকালে কিছু বলতে পারিনা। তুমি জানো বাবা কতটা অসুস্থ? বাবার হাই প্রেসার। এই কথা শুনলে বাবা স্ট্রোক ও করতে পারে। আমি আমার বাবার মৃত্যুর কারণ হতে চাইনা।

(ছেলেটা ফোন কেটে দিল। বুক ফাটা আর্তনাদে দুপুরের কড়া রোদেও সব অন্ধকার দেখছে সে। চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও পারছেনা। হঠাত একটা ঝড়ে সব উলোট পালট হয়ে গেল। এমন করে তো সে ভাবেনি। পাশ থেকে হাসান বুঝাচ্ছে। ছেলেটা একটার পর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে যাচ্ছে। হাসান সিগারেটের প্যাকেট টা সরিয়ে রাখলো। হাসান বুঝানোর চেষ্টা করছে সর্বাত্মক ভাবে। কিন্তু তাতে কি? হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা কি এত সহজেই থামবার? নাহ, মোটেই না। সিগারেটের চেয়েও অনেক বড় আগুন যে ছেলেটার বুকে জ্বলছে।
এরই মাঝে ছেলেটা তার আরেকটা কাছের বন্ধু ইথান কে ফোন দিলো। ইথান ঢাকায় ছিল, ভার্সিটি তে। ইথান সাথে সাথেই চলে আসতে চাইলো, কিন্তু পরের দিন তার পরীক্ষা তাই অপারগতা প্রকাশ করলো।
এদিকে হাসান ছেলেটাকে নিয়ে একটু বের হলো। ২ বন্ধুর মাঝে হাজারো কথা চলছে। হাসানের হাজারো চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। এরই মধ্যে ছেলেটার বাসা থেকে  ফোন আসে। মা ফোন করে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় তুই? বাড়ি ফিরবি কখন? না খেয়ে বেড়িয়ে গেলি।“ ছেলেটার উত্তর, “একটু কাজ আছে, আমি আসছি পরে, এসে খাবো।“
কিছুক্ষণের মধ্যে টিউশনের বাসা থেকে কয়েকটা ফোন আসে। ছেলেটা ফোন রিসিভ করলোনা।  দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মাঝে একটা হোটেলে ঢুকে ২জন খেয়ে নিল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। কোন সমাধানের খোঁজ মিলছেনা। এরই মধ্যে ইথানের ফোন।

– কই তুই দোস্ত?
– কাকীর দোকানের পাশে বসে আছি।
-কে কে?
– আমি আর হাসান।
-থাক, আমি চলে আসছি। আমার আগামীকালের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। ১০ মিনিট লাগবে। এসে কথা বলছি।
-ওকে। আয়।

ফোন কাটতেই ১টা ফোন আসল ফয়সাল নামের এক বন্ধুর।
ফয়সাল মেয়েটির স্কুল ও ছেলেটির ভার্সিটি লাইফের বন্ধু। ওদের সম্পর্কের কথা ফয়সাল জানতো।
-হ্যালো…
– কিরে কি খবর? নীলার কি খবর রে? একটু আগে ফোন দিয়া বলল,”জরুরী দরকার বাসায় আয়। শুক্রবার আমার বিয়ে। আব্বু একা সব কিভাবে করবে, তোদের সব প্লান করতে হবে। জলদি বাসায় আয়।“ ঘটনা কি? ও কি ফান করলো? আমাদের ঠক দেওয়ার জন্য?
-নাহ। ওর বিয়ে। যাহ, গিয়ে দেখ কি বলে। আর কি অবস্থা আমাকে জানাইস।
-সত্যি ই কি বিয়া ঠিক হইছে?
-হুম। যা গেলেই ওর মুখে সব জানতে পারবি। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবি কি হলো আর কি পরিস্থিতি।
-আচ্ছা আমি যাচ্ছি। বায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ইথান হাজির। তারপর প্রায় রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কথোপথন।

এর মধ্যে ছেলেটা ফয়সালকে ২ বার ফোন দিল।
ফয়সাল বলল ওরা নাকি বিয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনার প্লান করছে। এখনো বাসা থেকে বের হয়নি। ছেলেটা আবারো বলল বের হয়ে যেন কল দেয়।

রাত হচ্ছে, সবার বাসায় ফেরার ও সময় হয়েছে। হাসান ও ইথানকে যেতে হবে।
ইথানের বাসা থেকে ফোন আসছে। হাসানেরও তাই। তবে ওরা ওদের বন্ধুর অবস্থা বুঝতে পারছে। ওরা চলে গেলে ছেলেটা একা বাসায় গিয়ে না জানি কি দূর্ঘটনাই ঘটিয়ে দেয়। হাসান ওর সাথে ছেলেটাকে রাতে থাকতে বললো। কিন্তু ছেলেটা সেই দুপুরে বেড়িয়েছে। ওর ও বাসায় ফিরতে হবে। নাহলে মা দুঃশ্চিন্তা করবে।

এদিকে ইথান ভার্সিটি থেকে সোজা বন্ধুর কাছে। বাসায় ও যায়নি। ছেলেটা ইথানকে বলল, “তুই আজ আমার সাথে আমার বাসায় থেকে যা।“ বন্ধুর অবস্থা বুঝে আর হাসানের পরামর্শে ইথান বাসায় ফোন দিয়ে মিথ্যা বলে থাকতে রাজি হলো।
রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে ৩ বন্ধুর কথা হচ্ছিল। এমন সময় ছেলেটা আর সহ্য করতে না পেরে কেঁদে উঠলো। বাকি ২ জন বুঝিয়ে সামলানোর চেষ্টা করলো।
এরপর হাসানকে বিদায় দিয়ে ইথানকে নিয়ে বাসায় ফিরলো ছেলেটা।

ইথানের জন্য খাবারে ব্যবস্থা করে নিজেও ইথানের সাথে বসল একটু খাওয়া যায় কিনা।
খাবার শুরুর ঠিক একটু পরেই ফয়সালের ফোন।

-হ্যালো…
-মাত্র(প্রায় ১০;৩০) বের হলাম রে। সব প্লানিং করে। কতজনের আয়োজন, কিভাবে কি হবে ইত্যাদি সব পরিকল্পনা করে বের হলাম।
– ওকে পরে কথা বলি।

ছেলেটা ফোনটা কেটে দিল। ফয়সালের কথা শুনে ছেলেটার বাধভাঙা কান্না শুরু হলো। খাবারে প্লেট রেখে সিগারেট জ্বালিয়ে বিষাক্ত ধোঁয়া টানছে বুকের ভেতর। আর অশ্রুজল হয়ে সব ঝড়ে পড়ছে চোখ বেয়ে।
একটার পর একটা সিগারেট আর কান্না চলছেই। )

এমন সময় মেয়েটার ফোন। ফোন কেটে কলব্যাক করে ছেলেটা।

-কি করছো তুমি?
– কি আর করার আছে বলো? কাঁদছি আর সিগারেট টানছি। (সরল উত্তর)
– তুমি ভিডিও কল করো ইমুতে।

কল কেটে ইমুতে ভিডিও কল।
(ছেলেটা তো কান্না করছেই, মেয়েটার মুখেও হাসি নেই। চোখে পানি বুঝা যায়। )

-তুমি সিগারেট খাচ্ছো কেন? সিগারেট খাইবানা আর।
-তুমি সিগারেট ছাড়া আর কি রাখলা? আমি তো চাইনি সিগারেট খেতে। তুমি ১টা বার তমার বাবাকে বলো যে তুমি বিয়েটা করতে চাওনা। এখনো সময় আছে। এখনো কিছু হয়ে যায়নি। আজ মঙলবার। কাল বুধবার, পরশু হলুদ। যা করার কালকের মধ্যেই করতে হবে। তুমি একটা বার তোমার বাবাকে বলো প্লিজ।

-তুমি সিগারেট খেওনা। আর আমি কি বলবো বলো? এখন বলে কোন লাভ হবেনা। সব হয়ে গেছে। বিয়ের সব আয়োজন ও হয়ে গেছে।  আমি আব্বুকে কিছুতেই বলতে পারবনা। তুমি একটু বুঝতে চেষ্টা করো।
-আব্বুকে বলতে না পারো, অন্তত আম্মুকে বলো। আজকের রাতটা চলে গেলে আর এই সময়টা পাবেনা নীলা। প্লিজ ১ টা বার ট্রাই করো। ১ টাবার সাহস করে বলো। আর নাহলে আমি পাত্রের  সাথে  কথা বলি। কিছু একটা আমাকে করতে দাও নাহলে তুমি একটা কিছু করো।
-নাহ, ওই ছেলেকে ফোন দিলে ঝামেলা লাগবে। আমি এসব চাইনা। আর আব্বুকেও আমি বলতে পারব না। আর তুমি না বলছিলা যে তুমি প্রতিষ্ঠিত হবার আগে যদি আমার বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে তোমার কিছু করার থাকবেনা। তাহলে এখন তো তাই হচ্ছে।
-সেটা ৩ বছর আগের কথা। এরপর তো আমি এও বলেছি যে তুমি যদি তোমার পরিবারকে রাজি করাতে না পারো তাহলে আমি তোমার আব্বু আম্মুর পায়ে ধরে হলেও রাজি করাবো। সেটা কেন বলছোনা?
-যাইহোক, দেখো এখন আর কিছু করার নাই। আমার ভাগ্যে যা আছে আমি তাই মেনে নিচ্ছি। আমার ভাগ্যে এমন ছিল তাই এমন হলো।
-ভাগ্য বদলানোর একটা চেষ্টা তো করবা নাকি? ১টা বার ট্রাই করো। নাহলে আমাকে ট্রাই করতে দাও। আমাকেও কিছু করতে দিচ্ছো না। নিজেও কিছু করছো না।
-আসলেই এখন আর কিছু করার নেই।

চলবে……..

দুঃস্বপ্ন-৪

দীর্ঘসময় নীলার সাথে কথা হলো ছেলেটার। ছেলেটা তার সবটুকু আবেগ অনূভুতি দিয়ে নীলাকে বুঝাতে ব্যর্থ যে নীলাকে সে কতটা চায়, কতটা ভালোবাসে, তাকে ছাড়া ছেলেটার জীবন ধূসর মরুভূমি।
অবুঝ শিশুর মত অঝর কান্না ও নীলাকে একটি বারের জন্য হ্যাঁ বলাতে পারেনি।

গভীর রাতের অন্ধকারে ছেলেটার সব পথ যেনো হারিয়ে গেছে। দিশেহারা ক্লান্ত পথিকের মত পথ খুঁজে পেতে চাইছে। যেখানে তার সব চেষ্টাই ব্যার্থ হচ্ছে। হতাশা তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। বেঁচে থাকার সামান্যতম আশাটুকুও সে পাচ্ছেনা।

ছেলেটার সাথে কয়েকটা বন্ধুর কথা হলো কিভাবে কি করা যায়। বন্ধুরাও খুব ব্যথিত। সবাই সাহস দিল। বলল কিছু হবেনা। আগামীকাল কিছু একটা করব। এদের মধ্যে আহমেদ, পরী অন্যতম।

আহমেদ আর পরী উভয়েই নানা ভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। আহমেদ বলল, “ সকাল টা হতে দে। একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করব”।
পরী তো নীলাদের বাসায় ই যেতে চাইল। আরো হাজারো সান্ত্বনা দিয়ে বুঝাতে চাইল।
অবশেষে প্লান হলো পাত্রকে সব জানানো। এখন শুধু নীলাকে রাজি করানো বাকি।

ইথান পাশেই আছে। ছেলেটা মেয়েটাকে আবার ফোন করলো। রিসিভ হচ্ছে না। মেয়েটা হয়তো বিজি। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা ফোন দিল। সারারাত ছেলেটা নীলা কে একটা কথাই বুঝাতে চাইলো যে, “আমি তোমায় ছাড়া নিঃস্ব, তাই ১ বার অন্তত তোমার বাসায় জানাও। যাতে অন্তত এই স্বান্তনা টুকু নিয়ে বাঁচতে পারি যে তুমি চেষ্টা করেছিলে কিন্তু পারোনি।“

অথচ সারারাত অশ্রুসজল নয়নে কখনো ফুঁপিয়ে কখনো চিৎকার করে কেঁদেও সে বুঝাতে ব্যার্থ। অনেক নাটকের মধ্যে সারা রাত পার করে দিল ফোনে কথা বলেই। কোন পথ খোলা নেই আর। নীলা কোন ভাবেই রাজি হচ্ছেনা।

পরদিন সকালেও অনেক্ষণ কথা হলো। এর আগে ছেলেটা কখনো খালি পেটে স্মোকিং করেনি। অথচ সেইদিন সকালে ৭টা সিগারেট নিমিষেই শেষ।
অবশেষে ছেলেটা নীলাকে রাজি করালো যে সে তার বাবাকে ১বার বলবে।

ছেলেটা নতুন আশা খুঁজতে লাগলো। কিন্তু সময় যাচ্ছে  অথচ মেয়েটা বলি বলি করে আর বলছে না। কিছুক্ষণ পরে বলল বাবা বাইরে চলে গেছে বিয়ের বাজার করতে। আসলে বলব!!!
আসলে হয়তো আর কোনদিন বলাই হবেনা।
সকাল ১০টা। নীলা বলল সে ছেলেটার সাথে দেখা করতে চায়। সে কিছু কাজের জন্য মার্কেটে আসছে। নীলা বলল, “আমি এসে তোমাকে ফোন দিচ্ছি”।

বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। ছেলেটা ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে ফোনের অপেক্ষায়। এদিকে মা ডাকছে নাস্তা করার জন্য। ছেলেটা ইথানের জন্য নাস্তা আনলো তার রুমে। এমন সময় নীলার ফোন।
নাস্তা না করেই দুজনেই দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। ছেলেটা বৃষ্টি-কাঁদা কিছু না ভেবেই দ্রুত দৌড়ে-হেটে চলছে। অনেকদূর আসার পরে মনে হলো সে তার ওয়ালেট টা রেখে এসেছে। আবার দৌড়ে গেলো বাসায়। ওয়ালেট টা আনতে।

এদিকে নীলা আরো ২ বার ফোন দিয়ে ফেললো। “কই তুমি? আসছো না কেন? আমি দাঁড়িয়ে আছি”।
ছেলেটা ৫ মিনিট সময় চেয়ে নিল। আর যতটা দ্রুত সম্ভব সেখানে পৌঁছালো।
সারা গায়ে বৃষ্টির পানিতে চোখের জল বোঝা না গেলেও হাহাকার ভরা চোখ দুটি ঠিকই বুঝা যাচ্ছে। ছেলেটা দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে নীলার সামনে এসে দাড়ালো। পায়ে-প্যন্টে কাঁদা লেগে আছে। কতটা উন্মাদ হয়ে আছে তা ছেলেটাকে দেখলেই বুঝা যায়।
দুজন সামনা সামনি দাঁড়িয়ে। নীলার চোখ ভেজা। এর আগে কখনো এমন করে নীলাকে দেখেনি ছেলেটা। সাধারণত নীলা খুব হাসিখুশি একটা মেয়ে। কিন্তু আজ সেই হাসিটা নেই। বোরখার জন্যে মুখটা ঢাকা। গালের মিষ্টি টোল টা দেখা যাচ্ছেনা। দুজন দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে।

একটু পর নীলার ছোট বোন আসলো। ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলো, “ভাইয়া কেমন আছেন”?
-ভালো না, তোমার বাবা ভালো থাকলে দিলো কই? তোমার বাবা  এটা কি করলো? তোমরা কেউ কিছু বললা না কেন?
-কি বলব ভাইয়া? আমাদের বলার কি আছে! আব্বু সব ঠিক করে ফেলছে।
-তাতে কি হইছে? তোমরা সবাই মানা করতা।
-আমরা আর কি মানা করব! আব্বুর যেটা ভালো মনে হইছে করছে। তাছাড়া বড় আপু ও তো কিছু বলে নাই।
নীলাঃ আমি কি বলব? বলার কোন পরিস্থিতি ছিল? তুই (বোনের দিকে) জানিস না? আব্বু তো সব ঠিক করেই আসছে।

এমন সময় নীলার বাবার আগমন। বিয়ের কিছু শপিং করবে। নীলার বাবা কাউকে দেখেনি। বাবাকে দেখে নীলা আর ওর বোন বিদায় নিয়ে জলদি চলে গেলো।
এরপর আহমেদ আসলো। ছেলেটা নীলাকে ফোন করে বলল সে এক্ষুণি তার বাবাকে সব বলবে।
নীলাঃ তুমি বাবাকে কিছু বলবেনা। বললে আমি বলব আমি তোমাকে চিনিনা!!! আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক ও নেই। সব মিথ্যা।

কিছুক্ষণ পর নীলার বাবা অন্য দিকে গেলো। তখন ছেলেটা নীলার সামনে গিয়ে আবারো বুঝালো বাবাকে বলার বিষয়ে।

নীলাঃ তোমার এতই যেহেতু বলার ইচ্ছা তাহলে বলো। আর তুমি বলার সাথে সাথে আমি আত্মহত্যা করব। আমার পরিবার ও শান্তি , তুমিও শান্তি!!!

চলবে……..

দুঃস্বপ্ন-৫

হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা কতটা নিষ্ঠুর তা শুধুমাত্র সেই জানে যার হৃদয় ভেঙেছে। এ ব্যাথা প্রকাশের কোন ভাষা নেই। এই যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতাও সবার নেই।
নীলার শেষ বাক্য শুনে ছেলেটারও সেই একই অবস্থা। বেঁচে থাকাটা যেন বৃথা মনে হচ্ছে। ছেলেটা কি পারবে এই যন্ত্রণা সহ্য করতে!

হাসান, ইথান ও আহমেদ এর সাথে ছেলেটা একটা চায়ের দোকানে বসলো।
বুকফাটা আর্তনাদে ছেলেটার ভেতর চৌচির হয়ে যাচ্ছে। সিগারেটের ধোঁয়ার মতো চোখের পানি ও আর আটকে রাখতে পারলোনা। বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। বাঁধভাঙা সে অশ্রুজল জনাকীর্ণ চায়ের দোকানে থেমে থাকেনি।

হাসান টিস্যু আর রুটি এনে দিয়ে বলল, “চোঁখ মুছে রুটিটা খেয়ে নে”।
কিন্তু ছেলেটা খাবে কি করে? ওর কি খাওয়ার মত কোন অবস্থা আছে?
তবুও হাসানের কড়াকড়ি তে কিছুটা খেলো।

এভাবে প্রায় দুপুর ২ টা পর্যন্ত হাসান আর আহমেদের সাথে সময় কাটালো ছেলেটা।
নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। বুকটা ভার হয়ে আছে। মনে হয় লক্ষ টনের পাথর চাপা দেওয়া। হাসান আর আহমেদ তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে বন্ধুকে ভালো রাখার। মাঝে মাঝে পরী ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছে। পরী ছেলেটাকে কোথাও। কিন্তু কোথায় যাবে সে? কোথাও গেলে কি তার মন থেকে সব মুছে যাবে? পরী তার এক বন্ধুর ঠিকানা দিয়ে সেখানে ছেলেটাকে ঘুরে আসতে বলল। ২-১ দিন সেখানে থাকলে হয়তো মনটা ভালো লাগবে। কিন্তু ছেলেটা রাজি হলোনা।
অবশেষে ৩টার দিকে ছেলেটা এক বাসায় পড়ানো শেষ করে নিজের বাড়ি ফিরলো। গোসল করে মাকে দেখানোর জন্য খেতে বসলো ছেলেটা। মা একটু সরে যেতেই প্রায় না খেয়ে উঠে পড়লো সে। কিন্তু মাকে বুঝালো সে খেয়েছে। এসে নিজের ঘরে শুয়ে আছে ছেলেটা।

একটু পরেই পরীর সেই বন্ধু ফোন করলো। তার সাথে কথা বলে ছেলেটা হুট করেই ঐ মুহুর্তে সেখানে যেতে রাজি হলো। অথচ অনেক দূরের পথ, তাছাড়া যার সাথে মাত্র কথা বলে পরিচয়, যাকে কোনদিন দেখেনি, যার সাথে কোনদিন কথাও হয়নি এমন একটা ব্যক্তির সাথে দেখা করার জন্য সে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এদিকে হাসান ও আহমেদ ছেলেটা কে ফোন দিচ্ছে। অন্য ফোনে কথা বলায় ছেলেটা ফোন ধরতে পারেনি। পরে ছেলেটা কল ব্যাক করে। ওরা খুব চিন্তিত। ভেবেছিল উল্টো পাল্টা কিছু করে বসল কিনা।

তখন বিকেল ৪ টার একটু বেশী বাজে। ছেলেটা যাবার জন্য প্রস্তুত। মাকে মিথ্যা বলে সে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। কেননা মা যদি শুনে এমন একটা অপরিচিত ব্যক্তির সাথে সে দেখা করতে যাচ্ছে যাকে সে চিনেই না।

বাজারে হাসান ও আহমেদের সাথে দেখা করলো সে। ওদের কাছেও মিথ্যা বলা। জানলে যে ওরাও যেতে দিবেনা। এমনিতেও যাবার জন্য ওরা মানা করছিল। পরে বিদায় নিয়ে ছেলেটা বাসস্ট্যান্ড এর দিকে গেলো। বাসের টিকিট কেটে বাসে উঠে পেছনের দিকে একটা সিটে বসলো সে। এমন সময় নীলার ফোন।
-কই তুমি?
-চলে যাচ্ছি, অনেক দূরে। তুমি যেমনটা চাও।

চলবে….

দুঃস্বপ্ন-৬

নীলার সাথে কথা বলা শেষ করে বাসষ্ট্যান্ড দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটি। ছেলেটা হিমু (পরীর বন্ধু, যার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে ছেলেটি)  কে ফোন করলো। হিমুর সাথে কথা বলে হিমুর দেওয়া ডিরেকশন অনুযায়ী রাস্তার ওপারে একটা ডিম বিক্রেতার কাছে ফোন টা ধরিয়ে দিল ছেলেটা।  হিমু ডিম বিক্রেতা কে বলল ছেলেটাকে যেন হিমুর এলাকার অটো/রিক্সায় উঠিয়ে দেয়। হিমুর কথা মত ডিমওয়ালা ছেলেটাকে একটা অটোতে উঠিয়ে দিলো।

প্রায় ১৫ মিনিট পর কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে গেল ছেলেটা। সেখানে পৌঁছে হিমু কে ফোন করে মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করার পর হিমু আসলো।

খুবই সাদামাটা একটা মানুষ হিমু। যতটা সাদামাতা ভেবেছিলো ছেলেটা তার চেয়েও অনেক বেশীই সাধারণ। যেইহোক, দেখা করে একটা হাটতে হাটতে কুশলাদি বিনিময় ও প্রাথমিক সাক্ষাৎ পরবর্তী কথপোকথন এর মধ্যেই একটা চায়ের দোকানে বসলো ওরা।
চা-সিগারেট পানের সাথেই কথা চলছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আসতে কষ্ট হয়েছে কিনা। ২ জনের এলাকার ভিন্নতা সহ বিভিন্ন বিষয়।
চা পর্ব শেষে হিমুর বাসার দিকে যাত্রা। পায়ে হেঁটে  ৫ মিনিটের পথ। কথা বলতে বলতে বাসায় আসলো ওরা।

ছেলেটা কিছুক্ষণ বসার পর ফ্রেশ হয়ে আসলো। এরপর রাতের খাবার পরিবেশন করা হলে খেয়ে নিলো ২ জনেই। আর কথা তো চলছেই।
এর মধ্যে ইথান, হাসান ফোন করে ছেলেটার লোকেশন এবং কার সাথে আছে জানতে চাইলো। ওরা অনেকটা চিন্তিত। হাসান কিছুটা রাগ ও বটে। কেননা ও চায়না ওর বন্ধুর কোন ক্ষতি হোক। এমন একটা অচেনা যায়গায় মথ্যা বলে এভাবে যাওয়া ছেলেটার ঠিক হয়নি। কিন্তু ছেলেটা তো পাগলামি করেই চলে এসেছে!

খাবার শেষে আলোচনা পর্ব। হিমু তার সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে ছেলেটাকে বুঝালো যে ছেলেটার এখন কি করা উচিৎ আর কি করা নয়। ছেলেটাকে বাস্তবতা বুঝিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে। কথার ফাঁকেই ছেলেটা ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করছে।
এখানে ছেলেটা তার জীবন মরণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছে। সে কিভাবে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে সেই চেষ্টা টুকু করছে।
ওদিকে নীলা হেসে খেলে সব বন্ধুদের তার বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছে। আর সে কথাগুলো দাওয়াত প্রাপ্ত বন্ধুদের কাছ থেকে একে একে শুনতে হচ্ছে ছেলেটাকে। তীব্র যন্ত্রণায় মুমূর্ষ অবস্থা ছেলেটার। অপছন্দের সিগারেট গুলোও এখন কেন জানি খুব প্রিয় হয়ে গেছে। যেখানে একটা জীবন সিগারেটের আগুনের সাথে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সেখানে নতুন আরেকটা আনন্দঘন জীবনের হাতছানি।

ছেলেটা কিছুতেই ভাবতে পারছে না এসব। জীবন কেন এত যাতনাময়? সারারাত এভাবেই নানা কথায় কেটে গেলো। মাঝে একবার নীলা ফোন দিল। ছেলেটা এই প্রথম একটু কড়া ভাষায় তার সাথে কথা বলল। ছেলেটা বলল যে “তুমি যদি এতই ভালোবাসো আমাকে তাহলে একটা বার তো চেষ্টা করতে। এখন কেন এত সহানুভূতি দেখাচ্ছো?” এসব কথা শুনে নীলা ফোন কেটে দিল। এরপর অনেকবার ট্রাই করার পরেও নীলা ফোন রিসিভ করেনি।

অন্যদিকে ছেলেটার কিছু বন্ধু ছেলেটাকে জোড় করতে লাগলো বিয়েতে যাওয়ার জন্য। বলল তুই না গেলে আমরা কিভাবে যাই! এক বন্ধু বলল তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি, তুই এভাবে ভেঙ্গে পড়বি ভাবিনি। তুই আমাদের সাথে চল। নাহলে আমরা যাই কি করে। আরেক বন্ধু বলল তুই ও আমার ফ্রেন্ড নীলা ও আমার ফ্রেন্ড শুধু তোর কথা টা ভাবলেই হবেনা। ওর কথাটাও ভাবা দরকার। তাই আমি যাব।
আবার পরী আর মল্লিক বলল যে ওরা যাবেনা। যদি ছেলেটা যায় তাহলে পরী যাবে।
কিন্তু  ওদের মধ্যে কেউ ই ছেলেটার তীব্র যন্ত্রণা বুঝার ক্ষমতা রাখেনা।

অনেক কষ্টে ঘন্টা ২ এর জন্য ছেলেটা ঘুমালো। সকাল ৬ টায় হিমু ডেকে তুলল ছেলেটাকে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে।
তুরাগ নদীর পারে একটা চায়ের দোকানে চা পর্ব শেষ করে ছেলেটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। নিজেকে ধরে রাখার ক্ষমতা আর নেই তার। ছেলেটা আর হিমু ২ জন তুরাগ নদীর বাধের উপর গিয়ে বসলো। সকাল বেলা নতুন সূর্যের নিচে চারিদিকে নিস্তব্ধ নিরবতা। পিচ ঢালা রাস্তা জনমানবহীন। সেখানে বসে ছেলেটা চিৎকার করে কাঁদলো অনেকক্ষণ। সিগারেট পুড়িয়ে খোলা কন্ঠে গান গেয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর ছেলেটার অস্থিরতা বেড়ে গেলো। সে বাড়ি ফিরতে চাইলো। ওখানে তার আর ভালো লাগছে না। ছেলেটা হাসান আর আহমেদ কে খুব মিস করছে। সে হিমু কে বলল যে সে চলে যেতে চায়। হিমু কয়েকবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু তাতে কোন লাভ হলো না।

ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট গুলোকে মাটিচাপা দিতে  হিমুর কাছে গিয়েছিলো ছেলেটা।
উদ্দেশ্য তার কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে  মানসিক অবস্থার উন্নতি।
তখন হিমু ছেলেটাকে প্রশ্ন করল, “জীবন কি দেখতে চান? ভালবাসা কি বুঝতে চান?”
ছেলেটা বলল, “হ্যাঁ।”
হিমু তাকে নিয়ে গেলো “আপন নিবাস”।
আপন নিবাস বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফ্রি বৃদ্ধাশ্রম।  যেখানে কোন বৃদ্ধা মাকে রাখার জন্য ডোনেশনের প্রয়োজন হয়না।
ছেলেটা সেখানে  ভয়াবহ নিষ্ঠুর বাস্তবের সাক্ষী একেকটা মা কে দেখলো।
কথা বললো, জানার চেষ্টা করললো।

এক মা বলল যে, তার ছেলে তার হাতে একটা বনরুটি দিয়ে রাস্তায় দাড় করিয়ে বলেছিল আমি আসছি। কিন্তু সেই ছেলে নামের অমানুষটা আজো আসেনি। আজ সেই মা বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে আছে।

এক মাকে দেখেই মনে হলো খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের কেউ। ভাবলাম তিনি হয়তো বৃদ্ধাশ্রম এর দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু পরে জানতে পারলাম তার ছেলে আমেরিকায় থাকে, মায়ের মাথায় একটু সমস্যা আছে বলে মাকে ফেলে চলে গেছে।

দেখা হলো একটা ফুটফুটে বোবা মেয়ের সাথে।  বয়স ১০-১২ এর মত। ছেলেটাকে দেখে বারবার হিমুর কাছে জানতে চাচ্ছিল ছেলেটা কে। আর হিমু তার সাথে হাতের আঙ্গুল ঘুরিয়ে হ্যান্ডসেক করছিল। তার হাসি দেখে ছেলেটাও হ্যান্ডসেক করলো। এবার তো তার অনন্দ উপচে পড়ছে।

আরো এমন অনেক কিছুই দেখলো ছেলেটা যেখানে তাদের কষ্টের কাছে ছেলেটার কষ্টগুলো অতি সামান্য।

বের হবার পর হিমু ছেলেটাকে  বলল, “এখন আপনি কাঁদছেন না কেন? এদের দেখে কি আপনার কান্না পায় না? সকালে এমন একজনের জন্য কাঁদলেন যার কাছে আপনার চোখের জলের কোন মূল্য নেই।
এখন আপনার ভালবাসতে ইচ্ছে করছে না? আপনি এমন একজনকে ভালবাসা দিচ্ছেন যার আপনার ভালবাসার কোন প্রয়োজন নেই। অথচ এই মানুষগুলি একটু ভালবাসা চায়। ওদের একটু ভালবাসুন।

হিমুর কথা আর আপন নিবাস দেখার পর ছেলেটা বাঁচার মত অনেকটা সাহস পেলো।
সে ভাবলো তাকেও বাঁচতে হবে। নিজেকে অনেকটা কন্ট্রোলা করে সেখান থেকে ফিরলো সে।
এর মধ্যে আহমেদ আর হাসান কয়েকবার ফোন দিলো। ছেলেটা বলল যে সে কিছুক্ষণ পর রওনা দিবে। পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হবে। কিছুক্ষণ পরে হিমুর বাসা থেকে বিদায় নিলো সে। তখন প্রায় দুপুর ১২:৩০ টা। হিমু ও সাথে ছিল। হিমু ছেলেটাকে একটা চাইনিজ রেস্তোরায় নিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর পরে ছাড়লো। এর মাঝে হিমু ছেলেটাকে অনেক কিছুই বুঝালো।

অবশেষে একবুক সাহস আর সামান্য মানসিক উন্নতি নিয়ে ছেলেটা বাড়ির দিকে রওনা দিলো। আজ নীলার গায়ে হলুদ। ছেলেটার কিছু বন্ধু ওকে এখনো হলুদে যাবার জন্য অনুরোধ করছে। বলছে সে না গেলে ওরাও যাবেনা। কিন্তু ছেলেটা যায় কি করে! এমন নিষ্ঠুর বাস্তবতা এর আগে কি ঘটেছে? ছেলেটার জানা নেই।
না, সিনেমাতেও হয়নি। কেননা সিনেমাতে তো পরিশেষে দুজনার মিল হয়। কিন্তু এখানে তো আর সেই সম্ভাবনা নেই।

ছেলেটা খুব ক্লান্ত। বাসে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়েই রওনা দিলো সে। এমন সময় নীলা ফোন করেছে তাকে।
নীলা ফোন করে ছেলেটাকে হলুদে যাবার জন্য বলল। ছেলেটা এবারো অবাক।  নীলা কিভাবে পারে বলতে! নীলা খুব জোড় দিয়ে বলছে ছেলেটাকে থাকতেই হবে। এক্ষুণি যেন ছেলেটা বাসায় ফিরে নীলার হলুদে যায়।
ছেলেটা না করলো।
নীলার অনেক জোরাজোরির পর ছেলেটা তাকে বলল যে সে যাবে।
ছেলেটা ভাবলো অন্তত নীলাকে দেখতে পারবে। ২-১ টা কথা তো বলতে পারবে।

অবশেষে দীর্ঘ ৬ ঘন্টার যাত্রার পর ছেলেটা বাসায় ফিরলো।
বাসায় ফেরার পর ছেলেটার ছোট বোন আর আম্মু অবাক।
তাকে বলল ” তুই না ২-৩ দিন থাকবি বললি? তাহলে কাল গিয়ে আজই চলে আসলি কেন।??”
ছেলেটা মাকে বলল, “একটু পর বলছি, আমি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেই।”

এরপর গোসল শেষে ছেলেটা তার মাকে নিজের ঘরে ডেকে সব খুলে বলল।
মা শুনে নিশ্চই অন্য সবার চেয়ে বেশী কষ্ট পেয়েছিল।
ছেলেটা এই প্রথম মাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদলো আর বলল “এই পৃথিবীতে তোমাকেই সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি মা”।
মা ও ছেলেটার কষ্ট বুঝতে পেরে ছেলেকে আদর করে বুঝালো।

হাসান আর আহমেদ বাজারে অপেক্ষা করছে ছেলেটার জন্য। ছেলেটা মায়ের সাথে কথা শেষ করে তৈরী হয়ে বের হলো। উদ্দেশ্য নীলার হলুদে যাবে।

ছেলেটা হাসান ও আহমেদের সাথে দেখা করে নীলার বাসায় যেতে চাইলো।
ওরা কিছুটা অবাক হলেও ছেলেটার কষ্ট টা বুঝে।
যদিও ওরা চায়নি ছেলেটা যাক। তবুও ওরা ছেলেটাকে বলল যে, ” যদি তুই নীলাকে দেখার পর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিস আর সত্যিই তুই যদি ওখানে গিয়ে কিছুটা শান্তি পাস তাহলে আমরা যাবো। আমরা চাইনা তোর মনে কোন আক্ষেপ থাকুক। আমরা তোর পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।”

অবশেষে তারা নীলাদের বাসায় যাওয়ার জন্য একমত হলো এবং নীলার হলুদে যাওয়ার জন্য রওনা হলো।

চলবে……….

দুঃস্বপ্ন-৭ (শেষ পর্ব)

ছেলেটা হাসান আর আহমেদ কে সাথে নিয়ে নীলাদের বাসার কাছে ছোট্ট বাজারে গিয়ে পৌঁছালো। অটো থেকে নেমে ভাড়া পরিশোধ করে ছেলেটা একটা সিগারেট ধরাবে এমন সময় হাসান আর আহমেদ বলে উঠলো “এই নাকি তুই নিজেকে কন্ট্রোল করলি? আসতে না আসতেই সিগারেট ধরানো শুরু বাজারের মধ্যেই? সিগারেট খাবি ভালো কথা, সাইডে যাই। তারপর । ছেলেটা বুঝতে পারলো যে সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। আসলে তার মাথা ৪২০ হয়ে আছে।

এর মধ্যে নীলার কিছু বন্ধুকে দেখতে পেলো ওরা। নীলার বিয়ের কাজ নিয়ে ওরা খুব বিজি। ওদের উপর সব গুরু দায়িত্ব। অনেক শ্রম দিচ্ছে ওরা। একদম ঘেমে গেছে। ছেলেটা আর ওর ২ বন্ধু নীলার ঐ বন্ধুদের দেখে নীলাদের বাড়ির পথের একটা ব্রিজের কোণে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর ওই পথ ধরে নীলার বন্ধুরা নানা প্রয়োজনীয় সদাই নিয়ে যাচ্ছে। পথেই ছেলেটা আর তার ২ বন্ধু কে দেখে দাড়ালো। কিছুক্ষণ কথা বললো ওদের সাথে।

ছেলেটা এই প্রথম একটা জিনিস খুব ভালো করে লক্ষ্য করলো, নীলার বন্ধুরা ছেলেটার দিকে কেমন যেন একটা করুণা মার্কা হাসি হেসে দুঃখ প্রকাশের অভিনয় করছে। যেটা দেখে ছেলেটা বুঝতে পারলো আসলেই তার অবস্থা কতটা নির্মম। সব পরিচিত মুখের পেছনেও কত অপরিচিত একটা অবয়ব থাকে তা ছেলেটা খুব ভালো করে টের পাচ্ছে।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর নীলার বন্ধুরা নীলাদের বাসার দিকে চলে গেলো। হাসান, আহমেদ আর ছেলেটা একটা সাইডে গিয়ে ধোঁয়া উড়াচ্ছে। এর মধ্যে ছেলেটার ১ টা ফ্রেন্ড ছেলেটাকে ফোন দিয়ে বলল যে সে এবং আরেক ফ্রেন্ড আসতেছে নীলার হলুদে। হ্যাঁ এরাই সেই ফ্রেন্ড যারা ছেলেটাকে ছাড়া নীলার বিয়েতে যাবেনা। ছেলেটা গেলেই যাবে। ছেলেটা বন্ধুদের হতাশ করতে শিখেনি। তাইতো ওদের আগেই চলে এসেছে নীলার বাড়ি চিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওরা ২ জন কিছুক্ষণের মধ্যেই নাকি চলে আসবে। ওদের জন্য অপেক্ষা করতে বলল ছেলেটাকে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পালা শেষে ওরা ২ জন আসলো।   এর মধ্যে ছেলেটা নীলাকে অনেকবার ফোন দিয়েছে। কিন্তু রিসিভ হয়নি কলটা। আরো বেশকিছু কল দেবার পর নীলা ফোন রিসিভ করলো।  -সাজাসজ্জা শেষ? -হ্যাঁ, তুমি কই?  – ওরা সবাই আসছে। ওদের তোমার বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি আসব না।  -নাহ, তোমাকে আসতে হবে! তুমি জলদি আসো।  (এভাবে মিনিট দুয়েক কথা বলার পর ছেলেটা ওর বন্ধুদের সহ নীলাদের বাসায় গেলো)   বাসায় গিয়ে ছেলেটা নীলাকে আবার অনেকবার ফোন দিলো। কিন্তু আবারো সেই অবস্থা, রিসিভ হয়নি। আসলে ছেলেটা খুব বোকা। ওর তো বুঝা উচিৎ আজ নীলার গায়ে হলুদ। আজ ও খুব ব্যাস্ত। ও কি করে বারবার ফোনটা রিসিভ করতে পারে! এটা কি সম্ভব? মোটেই  না।  ছেলেটা বন্ধুদের সহ হলুদের স্টেজের পেছনে গিয়ে দাড়ালো। এর মধ্যে মেয়েটাকে সে খবর পাঠালো যে সে এসেছে।  স্টেজের পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর বন্ধু ও নীলার কিছু বন্ধদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছে। তবে মূল টপিক তো একটাই। “আজ নীলার হলুদ, আর সেখানে ছেলেটা উপস্থিত”!!!  এর মধ্যে নীলার অনেক ফ্রেন্ড ভাল মন্দ অনেক কথাই বলল। অনেক হাসি-তামাশা কৌতুক ও হলো। আবার কেউ কেউ মাঝে মাঝে সেই করুণা ভরা দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে সিগারেটের প্রতি ছেলেটার ভালোবাসা দেখেছে।  বেশ কিছুক্ষণ পর নীলা হাসি মুখে আসলো। হলুদের সাজে সেজেছে সে। মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগছে আজ। একসময় ছেলেটা তার নিজের জন্য এভাবে দেখতে চেয়েছিল নীলাকে। কিন্তু আজ!! দুঃসহ যন্ত্রণাকে আড়াল করে ছেলেটা মৃদু হাসি হাসলো। নীলা মন খুলে হাসছে। ছেলেটা তার এই হাসিমাখা মুখের একটা ছবি তুলতে চাইলে নীলা মুখ হাতে ঢেকে নিলো। ছবি তুলতে চাইলো না।   নীলার হাসি দেখে ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো, “এতো হাসছো যে?”  নীলা উত্তর দিল “তোমাকে আরা তোমার হাসি দেখে হাসছি”!!!  এরপর নীলা চলে গেলো। এরপর আবার সেই আগের মত নানা কথাবার্তা শুরু হলো। অনেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছেনা। ছেলেটা কয়েকজন কে দিয়ে কয়েকবার খবর পাঠালো যাতে একটু তাড়াতাড়ি শুরু করে। কেননা এখানে সে আর থাকতে পারছেনা। আরো অনেক সময় অপেক্ষার পর নীলার হলুদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। ঘরে বসে ফটোসেশন শুরু করে চলল অনেকক্ষণ। তারপর ঘর থেকে বের হয়ে স্টেজে আসার পালা। ছেলেটা সামনেই দাঁড়িয়ে দেখছে সব। এরমধ্যে ওড়না ধরে চারজন নীলাকে ঘর থেকে বের করে ঘর থেকে বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েকজন ছেলেটাকে ডাকলো ওরনার একটা কোন ধরার জন্য। ছেলেটা গেলোনা।   আহমেদ ছেলেটাকে ডেকে বলল, “ আসছিস যখন ভালো করেই সব করে যাবি, মনের মধ্যে যেন কোন আফসোস না থাকে। তুই ওড়না ধরেই ঘর থেকে বের করে স্টেজে নিয়ে যাবি”।

আহমেদের কথায় ছেলেটা সকল কষ্ট কে চাপা দিয়ে নীলার বাম পাশে দাঁড়িয়ে ওড়নার সামনের কোণ ধরে স্টেজে নিয়ে গেলো। এ সময় ছেলেটা খেয়াল করলো নীলার হাতে লাল-হলুদ রেশমি চুড়ি । হলুদ শাড়ির সাথে অনেক বেশী ম্যাচ করেছে। কিন্তু তার চেয়েও কোটি গুণ বেশী চুড়মার হয়েছে ছেলেটার হৃদয়। কেননা এইতো কিছুদিন আগে মেলা থেকে এই লাল হলুদে রেশমি চুড়ি গুলো কিনে দিয়েছিল সে তার প্রেয়সীকে। অথচ অন্য কারো জন্যে আজ তার সেই সাজ। আর এই সাজের একটা অংশ হতভাগা ছেলেটার দেওয়া রেশমি চুড়িগুলো।

ইতিমধ্যে স্টেজে চলে এসেছে তারা। ফটোসেশন চলছে। নীলা ব্যাস্ত। ছেলেটা স্টেজের পাশেই নীলার খুব কাছে দাঁড়িয়ে নীলাকে দেখছে। ছবি তোলার ফাঁকে ছেলেটা নীলাকে বলল, “চুড়ি গুলা খুব সুন্দর মানিয়েছে তোমাকে”।
নীলার হাসিমুখে উত্তর, “চিনতে পারার জন্য ধন্যবাদ”।
কিছুক্ষণের মধ্যে হলুদ দেওয়া শুরু হলো। প্রথমে নীলার দাদু নীলাকে হলুদ দিলো।
এরপর ওর আব্বু-আম্মু নানা ফরমালিটি পূরণ করে হলুদ পর্ব শেষ করলো।

ছেলেটা এর আগে কারো হলুদে গিয়ে কাউকে হলুদ দিতো না। বসে বসে অনুষ্ঠান দেখেই চলে আসতো। আজ কি করবে সে? আজ তো তার প্রেয়সীর হলুদ সন্ধ্যা।
নীলার বাবা মা হলুদ পর্ব শেষ করার পর ছেলেটা নিজে থেকেই নীলার পাশে গিয়ে বসলো হলুদ দেওয়ার জন্য।
এদিকে আহমেদ আর জিসান সময়গুলো কে ফ্রেমে বন্দী করার জন্য ক্যামেরা নিয়ে তৈরী।
ছেলেটে রসিকতা করে বিয়ের প্রফেশনাল চিত্রগ্রাহক ও ভিডিও গ্রাহক কে ডেকে বলল যে ভাই আমাদের ও ছবি নিয়েন।   ছেলেটা নীলার ডান পাশে বসে ওর দিকে তাকালো। অপরূপ সুন্দর কিন্তু তাকে পাবার অধিকার নেই ছেলেটির। ছেলেটার চোখ দিয়ে সব কষ্টগুলো হয়তো উপচে পড়ছে। নীলা হয়তো কিছুটা টের পেয়েছে। তাই হয়তো হাসিটা একটু ফিকে হয়ে গেলো।
ছেলেটা হাতে হলুদ নিয়ে মেয়েটার গালে লাগালো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ছেলেটা নীলা কে বলল, “কি অদ্ভুদ! তাইনা? আজ তোমার হলুদ! তুমি অন্য কারো হতে যাচ্ছো। আর আমি বসে তোমায় হলুদ দিচ্ছি!!! কিভাবে সব বদলে দিলে তুমি। যাই হোক, সুখী হও তুমি, শাদী মোবারক”।

এরপর ছেলেটা মেয়েটাকে স্টেজে রাখা প্রতিটা আইটেম খাইয়ে দিলো। চাপা হাসি হাসলো সবাইকে বুঝাতে যে তার কোন কষ্টই হচ্ছেনা। নীলা ও ছেলেটাকে  ২-১ টা আইটেম জোর করে খাইয়ে দিল। বেশ কিছুক্ষণ  সময় নিয়ে হলুদ পর্ব শেষ করে ছেলেটা স্টেজ থেকে উঠে বেরিয়ে এলো। আর একবারের জন্য সে পেছনে তাকায়নি। কেননা সে তার বাধভাঙ্গা যন্ত্রণা কে আর সইতে পারছিল না।

হাসান আর আহমেদ কে নিয়ে ছেলেটা বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় নীলার ছোট বোন ছেলেটা কে দেখে জিজ্ঞাসা করলো, “ভাইয়া আপনি কি চলে যাচ্ছেন?” ছেলেটার সম্মতিতে সে এসে ছেলেটার হাত ধরে দাড়াতে বলল, এবং খাওয়া দাওয়া করে যেতে বলল। ছেলেটা তাকে বলল যে অনেক রাত হয়েছে তাকে যেতে হবে। নীলার বোন ছেলেটাকে ধরে রাখতে না পেরে তার মাকে ডাকলো, “ আম্মু সাদ ভাইয়া চলে যাচ্ছে”।   একথা শুনে অনেকটা পাগলের মত দৌড়ে আসলো নীলার আম্মু। এসে ছেলেটা ধরে খুব আদর ও অনুরোধ করে থাকার জন্য এবং খেয়ে যাওয়ার জন্য বলল।

ছেলেটা নীলার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আন্টি আমি ওরে হলুদ দিয়ে আসছি, এখন বাসায় ফিরতে হবে। অনেক রাত হয়েছে”।  নীলার আম্মু প্রায় কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল, “বাবা তুমি কষ্ট পেয়োনা। আমাদের উপর রাগ করোনা। তুমি এভাবে রাগ করে চলে যেওনা। আমিতো তোমার মায়ের মত। মায়ের মনে কষ্ট লাগবে খুব যদি তুমি এভাবে চলে যাও। এভাবে যেওনা বাবা”।
আর বেশ কিছু কথা বলার পর ছেলেটা হাসান ও আহমেদ কে নিয়ে নাম মাত্র খেয়ে বের হয়ে চলে আসলো।

আসার সময় নীলার আম্মুর সাথে দেখা করে বিদায় নিয়া আসতে চাইলো ছেলেটা। নীলার আম্মুকে স্টেজের কাছে বলে নীলার বোনকে দিয়ে ওর আম্মুকে ডাকিয়ে এনে বিদায় নিতে চাইলো ছেলেটা।  এবার নীলার আম্মু আরো বেশ কিছু কথা বলল, “ আমি জানি বাবা তুমি খুব কষ্ট পাইছো, কষ্ট পাইয়ো না বাবা। আমরা তো আগে কিছু জানতাম না। আর আগে তো জানাও ও নাই কিছু। শেষমেষ আইসা জানলাম। এখন কি করুম কও। আর তুমি যে আসছো আমি তো জানি ই না। তোমার সাথে কথা বলুম তাও বলা হইলো না।“ ছেলেটা বলল, “ আর কোন কথার দরকার নেই আন্টি”। এই বলে ছেলেটা বিদায় নিয়ে চলে আসলো।   কি পরিমাণ কষ্ট নিয়ে যে ঐদিন ছেলেটা হেটে এসেছিল তা ও ছাড়া আর কেউ জানেনা। আর সবশেষে নীলার মায়ের কথা শুনে ছেলেটার কষ্ট বহুগুণে বেড়ে গেলো এই ভেবে যে নীলা যদি ১ টা বার ট্রাই করতো তাহলে হয়তো আজ ছেলেটার কলিজায় এই রক্তক্ষরণ হতো না।   অনেক কষ্টে ছেলেটা বাসায় এসে আরেকটা নির্ঘুম রাত কাটালো। 

২ দিন পর রবিবার। বিকেল বেলা নীলার এস এম এস আসলো।

“তোমার কথাটা আমার শোনা দরকার ছিল। এখন বুঝতে পারছি আমি ভুল করেছি। আমি ভাল নেই”।

Share on

খাদ মুভি রিভিউ

🎬 মুভিঃ খাদ (এডভেঞ্চার)⭕ পরিচালকঃ কৌশিক গাঙ্গুলি⭕ অভিনয়েঃ পল্লবী চ্যাটার্জি, অর্ধেন্দু ব্যানার্জী, মিমি চক্রবর্তী, রুদ্রনীল

Read More »